বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের অতীত ও বর্তমান
মরহুম অধ্যক্ষ মীর জুলফিকার আলী লুলু
সাধারণ সম্পাদক
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন
বাগেরহাটের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, এককালের জনপদ খলিফাতাবাদ আজকের বাগেরহাট নামের এই জনপদটি মূলতঃ যাত্রা শুরু করেছিল মহান সাধক হযরত খানজাহানের আগমনের মধ্য দিয়ে। তাঁর কল্যাণধর্মী কাজের জন্য এতদাঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। তার প্রমাণ এখনও মাজারে গেলে চোখে পড়ে। হযরত খানজাহান এর সংস্পর্শে বাগেরহাট আপন মহিমায় মাথা উঁচু করে এ জনপদের মানুষকে গর্বিত ঠিকানায় পরিচিতি দিয়েছে। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় বাগেরহাট দক্ষিণ বাংলার যথার্থ এক ঐতিহ্য মন্ডিত জনপদ। সেই জনপদে সমৃদ্ধ বাগেরহাটের প্রত্যাশায় ব্যতিক্রমী একটি সংগঠন বাগেরহাট ফাউন্ডেশন।
বৃটিশ শাসনের মধ্যভাগ ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাট থানার পত্তন ঘটে। এবং একই বছর জনপদটি যশোর জেলার অন্তর্গত মহকুমার মর্যাদা পায়। মহকুমায় রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে যে সকল প্রশাসক এখানে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেক জনদরদি প্রশাসকের নাম বাগেরহাটের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বাগেরহাটের মানুষ কৃতজ্ঞতার সাথে তাদের অবদানের কথা আজও স্মরণ করে। জনাব আলী আহম্মদ, জনাব বরকতুল্লহ, জনাব এম. মোকাম্মেল হক, জনাব সৈয়দ শামীম আহসান, জনাব মঞ্জুরুল করিম, জনাব এম. এম. জামান এর নাম উল্লেখের দাবি রাখে। আরেকজন মহকুমা প্রশাসকের নাম বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয়। তিনি হচ্ছেন জনাব মাশাররফ হোসাইন। এ মহৎপ্রাণ ব্যক্তিটি এ জনপদের কল্যাণে বিশেষ কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এ প্রসংগে একটি কল্যাণ তহবিল গড়ার পরিকল্পনার কথা তিনি বাগেরহাটের সুধী সমাজের সম্মুখে একদিন প্রকাশ করেছিলেন। বিষয়টি বাগেরহাটের বরেণ্য সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে জানালে সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি উৎসাহিত করেন। যার ফলশ্রুতিতে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ উদ্দীপনার শুভ সুচনা হয়।
১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারী রবিবার বিকেল চার ঘটিকায় তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশাররফ হোসাইনের সভাপতিত্বে বাগেরহাটের একটি সমাজ কল্যাণমুখী সংগঠন গড়ার জন্য সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন-সর্বজন শ্রদ্ধেয় অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, বাগেরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব খান মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডঃ বাবু নারায়ণ চন্দ্র দে, সম্পাদক এ্যাডঃ মোজাফফর হোসেন, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, শিল্পকলা পরিষদের সম্পাদক জনাব এ. কে. মহিউদ্দিন মুনসুর, শিশু একাডেমীর সম্পাদক জনাব শেখ বুলবুল কবির, ব্যবসায়ী কাজী হায়দার আলী, ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, নাটাবের নির্বাহী সম্পাদক জনাব আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ সভার সভাপতি মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশারেফ হোসাইন বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা গঠনের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা ও কর্মসূচীর বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সভায় সকলের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন এর যাত্রা শু রু হয়। বাগেরহাট মহাকুমার গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য, দুঃস্থ শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড় ও সরকারী-বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বিপন্ন পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমুখী সংগঠনকে তথা বাগেরহাট মহকুমার জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নামে সংগঠনটি গঠিত হয়।
এই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার লক্ষে ফাউন্ডেশনের একটি এডহক কমিটি গঠিত হয়। যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান। পৃষ্ঠপোষক জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আফতাব উদ্দিন হাওলাদার, জনাব মোজাহিদুর রহমান, খান আব্দুল লতিফ, মিসেস সুলতানা জামান চৌধুরী। কমিটির সভাপতি মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশারেফ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক জনাব মোল্ল আব্দুল জব্বার, কোষাধ্যক্ষ জনাব আনোয়ার হোসেন। সদস্যবৃন্দ ছিলেন, অধ্যক্ষ সহকারী পি.সি.কলেজ, অধ্যক্ষ খানজাহান আলী কলেজ, চেয়ারম্যান, বাগেরহাট পৌরসভা, এ্যাডঃ মোজাফফর হোসেন, এ্যাডঃ বাবু নারায়ন চন্দ্র দে, খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, এ.কে.এম. মহিউদ্দিন মুনসুর, অধ্যাপক বুলবুল কবির, ডাঃ খন্দকার হাবিব হোসেন, শামছুল আলম তালুকদার, এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, এফ,এম. মোস্তাফিজুল হক। পরে ১৯৮১ সালের ২৫ মে এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশারেফ হোসাইনকে সভাপতি করে নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির একান্ত প্রচেষ্টায় এবং প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতায় একই সালের ০১ সেপ্টেম্বর লটারীর মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকার তহবিল সংগৃহীত হয়। তবে শুরুতেই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। পরে ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বাগেরহাট মহকুমাকে জেলায় উন্নীতকরণ করা হয়। দীর্ঘ এক দশক পরে ১৯৯২ সালের জানুয়ারী মাসে প্রথমবারের মত কৃতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও গুণীজন সম্মাননা প্রদানের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়াজন করা হয়।
বাগেরহাটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল মান্নানের প্রচেষ্টায় ও সকলের সহযোগিতায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের ২১৭ জন কৃতি ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান এবং ৩৫ জনকে তাদের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১৯৯৪ সালে ফাউন্ডেশনের তহবিল বৃদ্ধির লক্ষ্যে পঁচা দীঘি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ প্রকল্প চালু করা হয়। এর মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের তহবিল কিছুটা সমৃদ্ধ হয়। ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে সচল করতে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তারপর দীর্ঘ দিনেও নিয়মিত কার্যনির্বাহী গঠণের উদ্যেগ নেওয়া হয়নি। এরপরে আবারও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এক যুগ পরে ২০০৩ সালে দ্বিতীয়বারের মত কৃতি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠনের আয়োজন করা সম্ভব হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সভাপতি পিউস কস্তার আন্তরিকতায় সেটা সম্ভব হয়েছিল। ঐ বছরের ১৫ থেকে ১৯ অক্টোবর পাঁচ দিনব্যাপী বাগেরহাট উৎসব-২০০৩ অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে জেলার ২১৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান ও একই সাথে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ১ জনকে, জেলার ৬৩ জন শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে, বাগেরহাটের ইতিহাস প্রণেতা হিসেবে ২ জনকে, মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ৫ জনকে, ক্রীড়াবিদ হিসেবে ৪ জনকে, কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ৪ জনকে এবং সাংবাদিকতা ও সমাজ সেবায় অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদানসহ ১১ জনকে মরণোত্তর সম্মাননা জানানো হয়। এছাড়া জেলার ৫৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করাসহ একটি সমাজসেবা সংগঠন, একটি ব্যবসা-বাণিজ্য সংগঠন ও একটি গ্রন্থাগারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এ সামগ্রিক কর্মকান্ডে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব শেখ হায়দার আলী বাবু। ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদে নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। ২০০৫ সালে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৩১ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় ফাউন্ডেশনের সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মঈন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক খান সালেহ আহমেদ।
২০০৭ সালের জানুয়ারী মাসে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পুরাতন কোর্ট মসজিদ মার্কেটের ৬ কক্ষ বিশিষ্ট কার্যালয় ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে কার্যক্রম শু রু করে। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের তৎকালীন সভাপতি জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সহিদুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর চতুর্থবারের মত জেলার ৪৯৯ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানে সর্বাÍক সহযোগিতা প্রদান করেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃতি সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান এবং তথ্য ও প্রদ্ভুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব শেখ মোঃ ওয়াহিদ উজ জামান। এ অনুষ্ঠানের পরে নির্বাহী কমিটি পরিবর্তনজনিত কারণে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আবারও স্থবির হয়ে পড়ে। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিয়মিত কমিটি গঠিত হয় । নতুন ভাবে এ কমিটি গঠনণর ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা বাগেরহাট-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোঃ শাহ নেওয়াজ তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব মোঃ ওবায়দুর রহমান। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাবিবুল হক খান, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম, ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দের কথা উল্লেখযোগ্য। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র চার মাসের মধ্যেই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের বাস্তব পদক্ষেপ নেয়। ফাউন্ডেশনের নিয়মিত কার্যক্রম জেলার কৃতি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও গুণীজন সম্মাননা দেওয়ার জন্য ৭২ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, একজনকে উচ্চ শিক্ষায় অনুদান প্রদান এবং দুইজন শিল্পী, এক জন সাহিত্যিক, দুই জন সাংবাদিক, দুই জন ক্রীড়াবিদ, এক জন মুক্তিযোদ্ধা, এক জন ক্রীড়া সংগঠক, দুই জন সমাজ সেবক, তিন জন শিক্ষাবিদ, এক জন সাংস্কৃতিক সংগঠক কে গুণীজন স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এছাড়া জেলার কৃতি দুঃস্থ ব্যক্তিদেরকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুদান প্রদানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে একজন শিল্পী, একজন সাহিত্যিক, একজন সাংবাদিক, একজন ক্রীড়াবিদ, দুইজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন ক্রীড়া সংগঠক, একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক, ও দুইজন শিক্ষাবিদ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। একই সাথে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের জন্য একজনকে মরণাত্তের এবং ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে গু রুত্বপূর্র্ণ ।ভূমিকার জন্য প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশে-বিদেশে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য বাগেরহাট জেলার ৯ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বাগেরহাটের কৃতি সন্তান বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ০৫ জন মাননীয় মহোদয়দেরও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। বর্তমান কমিটি ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্যদেরকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য তাদের ছবি সম্বলিত স্মরণিকা প্রথম বারের মতো প্রকাশ করা হয়।
২০১২ সালের ২১ এপ্রিল বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্যানে শিক্ষাবৃত্তি ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মাননীয় সংসদ সদস্য বাগেরহাট-২, জনাব এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, প্রাক্তন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আকরাম হোসেন, নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য, আজীবন ও সাধারণ সদস্য, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্কাউট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, সরকারী পি.সি.কলেজ, খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজ, ম্যাকফারসন লাইব্রেরী সহকারে প্রস্তুতি সভা করা হয়।বিজ্ঞাপন দাতা ও শিক্ষার্থী গুণীজন যাচাই-বাছাই ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সংগে স্মরণ করি। বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই সাফা পিয়র ড্রিংকিং ওয়াটার কর্তৃপক্ষকে। বিশেষভাবে স্মরণ করি বর্তমান সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পীকার জনাব এ্যাডঃ মোঃ আব্দুল হামিদ মহোদয়কে, তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানরে শ্রীবৃদ্ধি করেছেন।
২০১২ সালের ন্যায় বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে বর্তমান কমিটি ২য় বারের ন্যায় কৃতি শিক্ষার্থীদের এককালীন বৃত্তি ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ কাজে বর্তমান নির্বাহী কমিটিকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদানকারী হিসেবে ফাউন্ডেশনের বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপাষেক ও বাগেরহাট ২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জনাব মুঃ শুকুর আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোঃ হাবিবুল হক খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারবৃন্দসহ ফাউন্ডেশনের সকল পর্যায়ের সদস্যবৃন্দের কথা উল্লেখযোগ্য। ফাউন্ডেশনের নিয়মিত কার্যক্রম জেলার কৃতি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও গুণীব্যক্তিদের সম্মাননা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ৭৬ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন শিক্ষাবৃত্তি এবং একজন শিক্ষাবিদ, দুইজন সমাজসেবক, একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক, তিনজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন ক্রীড়া সংগঠক, একজন সাংবাদিক, দুইজন ক্রীড়াবিদ, একজন সাহিত্যিক এবং মরানোত্তর গুণীজন সম্মাননার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষাবিদ, একজন সমাজ সেবক ও একজন সাহিত্যিককে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার কৃতি অস্বচ্ছল গুণীজন ব্যক্তিদেরকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুদান প্রদানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন একজন শিল্পী, একজন সাংবাদিক, দুইজন ক্রীড়াবিদ, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রতিবন্ধী, একজন ক্রীড়া সংগঠক, দুইজন মেধাবী শিক্ষার্থী। গত বছরের ন্যায় এবারও বর্তমান কমিটি ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্যদেরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাঁদের ছবি সম্বলিত স্মরণিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া কৃতি শিক্ষার্থী ও গুণীজনদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত সহ একটি মনোরম বুকলেট প্রকাশ করার ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সকল কাজে যারা সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বর্তমান নির্বাহ কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মাননীয় সংসদ সদস্য বাগেরহাট-২, এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা ও সভাপতি জেলা প্রশাসক জনাব মুঃ শুকুর আলী মহোদয় সার্বিক সহযোগিতায় ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের অফিস কক্ষ, আইটি রুম ও দুইটি টয়েলেট নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান নির্বাহী কমিটি ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষ, করিডোর রূপায়নে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। একাজে সহযোগিতা প্রদানের জন্য ফকির গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফকির আক্তারউজ্জামান (সি.আই.পি) কে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া বর্তমান নির্বাহী কমিটি বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের আয় বৃদ্ধির জন্য সভা কক্ষ ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনকে ভবিষ্যতে সুন্দরভাবে পরিচালনা এবং এর কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি প্রস্তাব করতে চাই। প্রস্তাবগুলো হলো- বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা, প্রতি বছর কৃতি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, গুণীজন সম্বর্ধনা আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ফাউন্ডেশনের তহবিল বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ ও উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি। এছাড়া ফাউন্ডেশনকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষে এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে গঠণতন্ত্রের কিছু সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন প্রয়োজন বলে মনে করি। সর্বশেষে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ২০১৩ সালের বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান সফল করতে যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি আশা করি নিয়মিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন জেলার আপামর মানুষের উন্নয়নে সহযোগী হয়ে যুগ যুগ সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকুক- এটাই বাগেরহাট জেলাবাসীর প্রত্যাশা।
২০১৩ সালে ফাউণ্ডেশনের কৃতি শিক্ষার্খী গ গুণীজন সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রচার প্রকাশনা ও স্মরণিকা উপ কমিটির আহ্বায়ক জনাব বাবুল সরদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘প্রত্যাশা’ স্মরণিকায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মীর জুলফিকার আলী লুলু এর ’বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের অতীত ও বর্তমান’ শিরোনামে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো।
স্মৃতিকথায় বাগেরহাট ফাউন্ডেশন (১৯৮১-১৯৯২)
মরহুম মোল্লা আব্দুল জব্বার
প্রতিষ্ঠাকালীন ও আজীবন সদস্য
বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন
আমার শৈশবের পি.এন.জি মাঠ পরবর্তীতে পৌর পার্ক এবং বর্তমানে স্বাধীনতা উদ্যান। এই উদ্যানের ভিতর অবস্থিত বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাগেরহাট ইউনিট ভবন এবং যুব কেন্দ্র ও ব্যায়ামাগার।….১৯৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তদানীন্তন বাংলাদেশ রেডক্রস সোসোইটির মাননীয় চেয়ারম্যান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রাক্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ রেডক্রিসেন্ট ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন।….১৯৮১ সালে এই ভবনেই “বাগেরহাট ফাউন্ডেশন" নামে একটি সেবাধর্মী সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও আদর্শ শিশু বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি বর্তমানে আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। আমি এই প্রতিষ্ঠান দুটির সাথে এর জন্মলগ্ন থেকে সম্পৃক্ত হই।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন
১৯৮১ সালে একটি সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসাবে জন্মলাভ করে “ বাগেরহাট ফাউন্ডেশন।” ফাউন্ডেশনের গঠনের থিম, আইডিয়া, ভিশন, মিশন সম্পর্কে আমার জানা নেই। রেডক্রিসেন্ট ভবনে ফাউন্ডেশনের জন্ম। এর কার্যক্রমের সাথে আমি সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়ি, এই ভবনে ফাউন্ডেশন গঠনে যাদের শ্রম ও মেধা দিতে দেখেছি তাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে একটি তথ্য ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত এখানে তুলে ধরছি।
“বাগেরহাট ফাউন্ডেশন” গঠণ উপলক্ষে প্রথম সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারী, তদানিন্তন মহকুমা প্রশাসক জনাব মোঃ মোশাররফ হোসাইন এর সভাপতিত্বে তারই কার্যালয়ে। উক্ত সভায় তিনি “বাগেরহাট ফাউন্ডেশন” নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গঠণের মূল উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন। এই প্রস্তাব সভায় উপস্থিত সকলের মনঃপুত হয় এবং প্রস্তাবের পক্ষে উপস্থিত সম্মানীত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সর্ব জনাব মোঃ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক, বাবু নারায়ণ চন্দ্র দে, এ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন, বাগেরহাট পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান, মীর শওকত আলী বাদশা প্রমূখ। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাগেরহাট মহকুমায় গরীব, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য, দুঃস্থ শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলায়োড় ও সরকারী বেসরকারী চাকুরীজীবীদের বিপন্ন পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং বিপন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূখী সংগঠন তথা বাগেরহাট মহকুমার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা গঠণের সিদ্ধান্ত হয় এবং এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উক্ত সভায় নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠিত হয়।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক - জনাব এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমান, তদানিন্তন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। পৃষ্ঠপোষক মন্ডলী - জনাব আফতাব উদ্দিন হাওলাদার এমপি, মরহুম সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান এম.পি, মরহুম জনাব খান আব্দুল লতিফ এম.পি, মিসেস সুলতানা জামান চৌধুরী এম.পি। সভাপতি - জনাব মোঃ মোশররফ হোসাইন, মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট। সম্পাদক - জনাব মোঃ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট। দপ্তর সম্পাদক - জনাব মেল্লা আঃ জব্বার, সদস্য বাগেরহাট রেডক্রিসেন্ট ইউনিট। কোষাধ্যক্ষ - জনাব আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী সদস্য নাটাব, খুলনা বিভাগ। সদস্যবৃন্দ - অধ্যক্ষ, সরকারী পি.সি. কলেজ, অধ্যক্ষ, খানজাহান আলী কলেজ, প্রধান শিক্ষক, বাগেরহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সর্ব জনাব খান মতিয়ার রহমান চেয়ারম্যান, বাগেরহাট পৌরসভা, নারায়নচন্দ্র দে ভাইস-চেয়ারম্যান বাগেরহাট রেডক্রস ইউনিট, মোঃ মোজেফফর হোসেন এ্যাডভোকেট সম্পাদক বাগেরহাট রেডক্রিসেন্ট ইউনিট, খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, এ. কে. মহিউদ্দিন মুনসুর, ডাঃ খন্দকার হাবীব হোসেন, সামছুল আলম তালুকদার, এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, সভাপতি প্রেস ক্লাব বাগেরহাট, এফ. এম. মোস্তফিজুল হক, সম্পাদক নাটাব, বাগেরহাট।
এই সভায় ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠণের লক্ষ্যে প্রতিটি ২ টাকা মূল্যের তিন লক্ষ লটারী টিকিট ছাপা ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গঠণতন্ত্র প্রনয়নের জন্য কমিটি গঠিত হয়। আহবায়ক ছিলেন এ্যাডঃ নারায়নচন্দ্র দে, এ্যাডঃ মীর শওকত আলী বাদশা ও এ্যাডঃ আনোয়ার হোসেন। উল্লেখ যে, টিকিট মুদ্রণের জন্য খরচ বাবদ রূপালী ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় থেকে দশ হাজার টাকা পাওয়া যায় এবং বাকি সমুদয় ব্যয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করেন। দুই টাকা করে প্রতিটি লটারীর টিকিট বিক্রয় উৎসব চলছে, টিকিট বিক্রয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপ-কমিটি গঠিত হল, হিসাব নিকাশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাবু শিবপদ হালদার (বর্তমান আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) কে নিয়াগে প্রদান করা হল। ফাউন্ডেশনের পিওন হিসাবে আঃ হাকিমকে নিয়োগ প্রদান করা হল। এ কাজে শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব ফণিভূষণ সাহা ও বাগেরহাট রেডক্রসের পিওন ইউনুস আলী বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশাররফ হোসাইন বাগেরহাট শহরের সর্বস্তরের সমাজকর্মীদের এবং সরকারী কর্মকর্তাদের টিকিট বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত করলেন। সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার জনাব আঃ ছত্তার ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠনে তৎপর হয়ে ছিলেন। মহকুমার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লটারীর টিকিট বিক্রয়ে উদ্বদ্ধ করলেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় বাগেরহাটের বাইরে খুলনা ও ঢাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে লটারীর টিকিট বিক্রয়ের সহযোগিতা চাইলেন। অধিক টিকিট বিক্রয়কারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হল। স্টেডিয়াম মাঠে কৃষি, শিল্প প্রদর্শনী চলছিল, সেখানে স্টল নিয়ে টিকিট বিক্রয়ের ব্যবস্থাসহ রেজিষ্ট্রি অফিস, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কি জাতীয় মহিলা ভলিবল দলের খেলার মাধ্যমে টিকিট বিক্রয় করা হয়। অধ্যাপক বুলবুল কবীর এ কাজে বিশেষ সহযোগিতা করেন।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ২য় সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৫ মে, ১৯৮১। বিগত সাধারণ সভায় গঠিত গঠণতন্ত্র প্রণয়ন উপ-পরিষদের পক্ষে জনাব মীর শওকত আলী বাদশা (এ্যাডঃ) একটি খসড়া গঠনতন্ত্র সভায় উপস্থাপন করেন এবং সভায় এই গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত গঠনতন্ত্র মোতাবেক ১৯৮১-১৯৮৩ সালের জন্য ১ম কার্যকরী পরিষদ নির্বাচিত হয়। উক্ত পরিষদ নিম্নরূপ:
প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জনাব এ,এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। পৃষ্ঠপাষেক মন্ডলী- সর্ব জনাব আফতাব উদ্দিন হওলাদার এমপি, সৈয়দ মাজোহিদুর রহমান, এম.পি, খান আব্দুল লতিফ এম.পি। সভাপতি- জনাব মোঃ মোশাররফ হোসাইন, মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট। সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মোঃ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট। সহ-সভাপতি জনাব মোঃ নুর মোহম্মদ, প্রধান শিক্ষক, বাগেরহাট বহুমুখী বিদ্যালয় সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ মোজাফফর হোসেন, সম্পাদক রেড ক্রস ইউনিট বাগেরহাট। সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশা, সভাপতি প্রেস ক্লাব বাগেরহাট। কোষাধ্যক্ষ- জনাব আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী সদস্য নাটাব, খুলনা বিভাগ। দপ্তর সম্পাদ - মোল্লা আঃ জব্বার, সদস্য বাগেরহাট রেডক্রিসেন্ট ইউনিট।
সদস্যবৃন্দ ও অধ্যক্ষ, সরকারী পিসি কলেজ (পদাধিকার বলে), অধ্যক্ষ, খানজাহান আলী কলেজ (পদাধিকার বলে), চেয়ারম্যান বাগেরহাট পৌরসভা (পদাধিকার বলে), এ্যাডভোকেট নারায়নচন্দ্র দে; ভাইস-চেয়ারম্যান বাগেরহাট রেডক্রস ইউনিট, এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পাদক আইনজীবী সমিতি বাগেরহাট, জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন , জনাব এ.কে. মহিউদ্দিন মনসুর, অধ্যাপক সেখ বুলবুল কবীর, জনাব এফ,এম. মোস্তাফিজুল হক, জনাব সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, জনাব সামছুল আলম তালুকদার, জনাব শেখ মোজাফফর আলী, জনাব মোবারেক আলী এবং সার্কেল অফিসার-বাগেরহাট, মোল্লাহাট, ফকিরহাট, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া, শরণখোলা, রামপাল ও আঞ্চলিক পুলিশ পরিদর্শক মোংলা পোর্ট। এছাড়াও সভাপতি মহোদয় কর্তৃক মনোনীত বাবু অনীল কুমার চক্রবর্তী সহকারী কমিশনার বাগেরহাট, মিসেস রোজী আক্তার, মহিলা সমাজ কল্যাণ সংগঠক বাগেরহাট , জনাব ইউসুফ আলী চেয়ারম্যান, চাঁদপাই ইউনিয়ন পরিষদ। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্থির হয় যে, লটারী সম্পর্কিত কার্যাবলী এডহক কমিটি পরিচালনা করবে। এবং লটারীর ড্র অনুষ্ঠানের পর পরই নবনির্বাচিত কমিটির কাছে এডহক কমিটি ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি লটারী ব্যবস্থাপনায় যাদের কাছ থেকে সবিশেষ সহযোগিতা পেয়েছেন তাদেরকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ও নিজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে সামগ্রিক পৃষ্ঠপোষকতা, উৎসাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার খুলনা, মাননীয় জেলা প্রশাসক খুলনা, মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব রকিবুল হুদা, জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী, বাগেরহাট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও গণপুর্ত বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীবৃন্দ, বাগেরহাটের সকল ব্যাংক ব্যবস্থাপকবৃন্দ, খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব আনায়োরুল ইকবাল সাহেব, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র জনাব কাজী আমিনুল হক আমিন, মহকুমার সকল থানার সি.ও এবং ওসি, মোংলা পোর্টের সিআই অফ পুলিশসহ মহকুমার তদানিন্তন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমূখ ব্যক্তিগণকে।
অধিক টিকিট বিক্রয় করে যারা সম্মানিত হয়েছিলেন তাঁরা হলেন জনাব এ.এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, জনাব এম.এ.এইচ. সেলিম এম.পি ও বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, জনাব রফিকুল হুদা পুলিশ সুপার খুলনা, জনাব মোশাররফ হোসাইন মহকুমা প্রশাসক বাগেরহাট, সার্কেল অফিসার বাগেরহাট, মোল্লাহাট, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া, ফকিরহাট, জনাব কাজী আমিনুল হক ব্যবসায়ী খুলনা, জনাব ইউসুফ আলী চেয়ারম্যান চাঁদপাই ইউনিয়ন পরিষদ, মোল্লা আঃ জব্বার দপ্তর সম্পাদক বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড, নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত বিভাগ বাগেরহাট, মিঃ অনীল কুমার চক্রবর্তী, সহকারী কমিশনার বাগেরহাট, সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) রামপাল, বাগেরহাট ও মোল্লাহাট, জনাব এম এ হানিফ আঞ্চলিক পুলিশ পরিদর্শক বাগেরহাট, ম্যানেজার কৃষি ব্যাংক, বাগেরহাট, জনাব এ.কে. মহিউদ্দিন মুনছুর। মাননীয় হুইপ ও বাগেরহাট মেলার বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী জনাব মোঃ আশরাফ হোসেন এম.পি-কে সে সময় মরহুম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় ফাউন্ডেশনের টিকিট বিক্রয়ে সম্পৃক্ত করেছিলেন। সকলের প্রচেষ্টায় তিন লক্ষ টিকিটের মধ্যে দুই লক্ষ টিকিট বিক্রয় হল।
২৬/০১/৮১ ইং তারিখে ফাউন্ডেশনের কার্যকরী পরিষদের সভায় লটারী টিকিট বিক্রয় এর আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচিত হয়। সভা লটারীর টিকিট বিক্রয়ের আশাতীত আয় ও পরিমিত ব্যয়ে সভা সন্তোষ প্রকাশ করে এবং ইহাকে একটি উজ্জ্বল সাফল্য হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। একই সভায় ফাউন্ডেশন সঞ্চয়ী হিসাব হতে পাঁচ বছর মেয়াদী পাঁচ লক্ষ টাকার একটি স্থায়ী আমানত খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সভায় ফাউন্ডেশন লটারীর পরিচালনার আয়-ব্যয় হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যে নিরীক্ষণ কমিটি গঠিত হয় তাদেরই প্রদত্ত প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করছি।
১৯৮১ সালেই সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মূলধন থেকে ব্যয়ভার বহন করতে হবে বলে কর্মসূচী স্থগিত রাখা হয়। ১৯/১২/৮১ ইং তারিখে কার্যকরী কমিটি সভায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক জনাব এস.এ.এম. মোস্তাফিজুর রহমান সাহেবের উপস্থিতিতে পরবর্তী বৎসরের মার্চ মাসের যে কোন সুবিধা মত সময়ে ফাউন্ডেশন বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা হয়। কিন্তু নানাবিধ কারণে হয়ে ওঠেনি। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সীমিত ছিল। এই সময়ের ভিতরে ফাউন্ডেশনের তহবিল দশ লক্ষ টাকার উপরে উন্নিত হয়েছে। ০১/১২/৮৬ ইং তারিখ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় ফাউন্ডেশনের একটি সভা জেলা প্রশাসক জনাব মীর শাহাবুদ্দিন মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বাগেরহাট মহকুমা জেলায় উন্নীত হওয়ার আলোকে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ফাউন্ডেশন কার্যক্রম বিস্তার ঘটানারে লক্ষ্যে কর্মসূচী গ্রহণ, বৃত্তি প্রদান, অনুদান নিরূপণ, সদস্য চাঁদা নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে গঠণতন্ত্রে কতিপয় সংশোধনীর জন্য একটি উপ-কমিটি গঠিত হয়। অপর দিকে ফাউন্ডেশন কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষে একটি ওয়ার্ক প্লান প্রণয়ণ সাব-কমিটি গঠিত হয়। গঠণতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটি পর পর ৩টি সভার মাধ্যমে গঠণতন্ত্র সংশাধেন কার্য সম্পন্ন করে কার্যনির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করেন। কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন উক্ত খসড়া গঠণতন্ত্রে সংযোজনের জন্য একটি সংশাধেনী প্রস্তাব লিখিত আকারে পেশ করেন। প্রস্তাবটি ছিল ফাউন্ডেশন তহবিল সংরক্ষণ, বৃদ্ধিকরণ ও গতিশীল পরিচালনার জন্য একটি “ট্রাষ্টি বোর্ড" গঠণে। অতঃপর উক্ত সংশোধনীসহ গঠণতন্ত্র উপ-পরিষদের উপস্থাপিত খসড়া গঠণতন্ত্র সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্রটি মুদ্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এইটিই বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ সংশোধনীসহ সংকলিত গঠণতন্ত্র।
১৯৯০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফাউন্ডেশন বৃত্তি প্রদান ও ফাউন্ডেশন সপ্তাহ পালন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মোর্তজা হোসেন মুনসীর সভাপতিত্বে এক সভায় ২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী ফাউন্ডেশন সপ্তাহ উদ্যাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এবং একটি সংগঠনিক কমিটিও গঠিত হয়। কিন্তু “ এরশাদ হঠাও” গণ আন্দোলনের কারণে উক্ত সপ্তাহ পালন করা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক আত্ম প্রকাশ ঘটলো ১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারী থেকে ৯ জানুয়ারী পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি এবং গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের শুভ উদ্বোধন করেন।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন”এর প্রথম অনুষ্ঠানে বাগেরহাট জেলার সকল ইউনিয়ন পর্যায়ে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের প্রচার, প্রসার ও বিস্তৃতি ঘটানারে লক্ষ্যে প্রাথমিক, জুনিয়র, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক পর্যায়ে মেধাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করা হয়েছিল। ১৯৮৮-৮৯ সালের প্রথমিক বৃত্তি প্রাপ্ত ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে, জুনিয়র বৃত্তি প্রাপ্ত ২২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৫ জনকে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২ জনকে, স্নাতক পর্যায়ে ৭ জনকে, প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ ১১ জন, পি.এইচ.ডি. ডিগ্রীধারী ৩ জন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ১৪ জনকে ফাউন্ডেশন বৃত্তি প্রদান করা হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পুরস্কার প্রদানের জন্য বাছাই কার্য সম্পন্ন করতে সরকারী পিসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবর রহমান এবং উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অপরিসীম পরিশ্রম করেছিলেন। এছাড়াও ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানটি সুন্দর ও সফল করার লক্ষ্যে সকল উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দ বিশেষ করে ফাউন্ডেশনের সভাপতি তৎকালীন জেলা প্রশাসক, জনাব আঃ মান্নান, জনাব রবিউল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সম্পাদক এ্যাডঃ মোঃ মোজাফফর হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মীর শওকাত আলী বাদশা, কোষাধ্যক্ষ জনাব আনোয়ার হোসেন, সদস্য জনাব এ.কে. মহিউদ্দিন মনছুর, অধ্যাপক বুলবুল কবীর, জনাব শেখ মোজাফফর আলী বুদ্ধ ভাই এবং অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অপরিসীম পরিশ্রম করেছিলেন। এছাড়া দাপ্তরিক কাজে অধ্যাপক আক্তার ফারুকুজ্জামান এবং স্বেচ্ছাসেবী মল্লিক সেলিম রেজা, শেখ হায়দার আলী বাবু, কিশোর বকসী ও বিশ্বজিৎ সাহা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য হিসাবে আমার উপর দায়িত্ব ছিল স্মরণিকায় বাণী, লেখা ও বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, সনদপত্র ও আমন্ত্রণপত্র মুদ্রণ ও বিলি এবং অনুষ্ঠানের স্মরক লেপেল পিন ইত্যাদি সংগ্রহ করা।
ফাউন্ডেশন কার্যকরী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ায় বিগত ১২/০৮/৯৩ইং তারিখে ৩মাস মেয়াদী একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয় এবং ২৩/০৯/৯৩ইং তারিখে বিলুপ্ত কমিটির পক্ষে সম্পাদক জনাব মোঃ মোজাফফর হোসেন এ্যাডভোকেট ও দপ্তর সম্পাদক আমি মোল্লা আঃ জব্বার তৎকালীন এডহক কমিটির সম্পাদক জনাব হারুন-অর রশিদ, থানা নির্বাহী অফিসার সদর এর নিকট ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব, রূপালী ব্যাংকে স্থায়ী আমানাতের টাকা ২০,৭৮,৯২৪ এবং সঞ্চয় হিসাবে টাকা ৫২,১০৫.৫০ সর্বমোট ২১,৩১,০২৯.৫০ টাকা হস্তান্তর করি।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন”একটি অরাজনৈতিক সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান। যে সকল ব্যক্তিবর্গ এই ফাউন্ডেশন গঠনণ শ্রম দিয়ে এই তহবিল গঠন করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই শ্রম বা সময় না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ফাউন্ডেশন গঠনে বেশী অর্থ প্রদান করে অবদান রাখতে পারতেন। এ সময় ফাউন্ডেশন গঠনের উদ্যোক্তাগণ সর্বস্তরের জনসাধরণকে সম্পৃক্ত করে ফাউন্ডেশনকে একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। জনাব এম.এ. এইচ. সেলিম, বাগেরহাটের কৃতি সন্তান জনাব আ.স.ম. মোস্তাফিজুর রহমান এর যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরসূরী। ইতিমধ্যেই তিনি মরহুম জনাব আ.স.ম মোস্তাফিজুর রহমান সাহেবের প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নবরুপে শুরু করেছেন।….মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এম.এ.এইচ. সেলিম এমপি মহোদয় এর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে উদ্বোধন হয়েছে দড়াটানা ব্রীজ। দড়াটানা নদীর উপরে মুনিগঞ্জে দ্বিতীয় সেতু নির্মানের কাজ উদ্বোধন হয়েছে এবং উক্ত কাজ পুরোদমে চলছে। বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ ও নদীর পাড়ের রাস্তা নির্মানের কাজ শুভ উদ্বোধন হয়েছে। স্কুল-কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প, স্টেডিয়াম উন্নয়ন প্রকল্পসহ আরও অনেক কার্যক্রমের সফল সমাপ্তি হবে অচিরেই। এতসব কাজের মাঝে এম.পি. মহোদয় বাগেরহাট ফাউন্ডেশনকে সক্রিয় করবেন সে বিশ্বাস আমার ছিল।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আবার নব যাত্রায় শুরু হয়েছে এ খবরে আমি ফাউন্ডেশনের একজন কর্মী হিসাবে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি। তবে আমার কৌতুহল থেকে গেল বিগত ২৩/০৯/৯৩ তারিখ গঠিত এডহক কমিটিসহ বিগত এডহক কমিটিগুলি ফাউন্ডেশনের প্রকল্পসহ অন্যান্য স্থান থেকে কি পরিমান অর্থ আয় করেছে এবং কি পরিমান ব্যয় করেছে, তাহা জানবার।
৫ দিনব্যাপী ফাউন্ডেশনের বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে ১৫ অক্টোবর, ২০০৩। মাননীয় এম.পি. জনাব এম.এ.এইচ. সেলিম মহোদয়ের অনুপ্রেরনায় উদ্যোগী হয়ে ফাউন্ডেশনের বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে " বাগেরহাট উৎসব" বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বর্তমান জেলা প্রশাক জনাব পিউস কস্তা। সঠিক অর্থে এ আয়োজনে তিনি সম্পৃক্ত করেছেন জেলার প্রায় সকল সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব ও কর্মীদের। আমি জেনেছি, উৎসবের মাঝেই ফাউন্ডেশনের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপিত হবে এবং উৎসবের পর ফাউন্ডেশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে। এই সঙ্গে আমার প্রস্তাব, ফাউন্ডেশনের সার্বিক সেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য একটি “ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স" স্থাপিত হোক। যেখান অসহায় মানুষ পাবে নিত্য সেবা, গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী পাবে লেখাপড়ার সুযোগ। এ কমপ্লেক্স এ আয়বর্ধক প্রকল্প চালু করে ফউন্ডেশনের তহবিল সমৃদ্ধ হতে পারে।
আসুন সবাই মিলে নতুন শ্লোগান ‘সমৃদ্ধ বাগেরহাট’ গড়ার লক্ষ্যে এবং দুঃস্থ মানবতার সেবায় আজীবন সম্পৃক্ত থাকি।
বাগেরহাট উৎসব ২০০৩ উপলক্ষ্যে বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের স্মরণিকা উপ কমিটির আহ্বায়ক সেখ বুলবুল কবির এর সম্পাদনায় প্রকাশিত “প্রত্যাশা” নামক স্মরণিকায় ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন ও আজীবন সদস্য জনাব মোল্লা আব্দুল জব্বার এর ’স্মৃতিকথায় বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন (১৯৮১-১৯৯২)” শিরোনামে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো। লেখাটির কলেবর সংক্ষেপ করণের স্বার্থে এখানে সামান্য সংক্ষেপ করা হয়েছে।
বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের ইতিবৃত্ত
অধ্যাপক খান সালেহ আহমেদ
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন
১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারী রবিবার বিকাল ৪ ঘটিকায় তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাননীয় মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশারেফ হোসাইনের সভাপতিত্বে বাগেরহাটে একটি সমাজকল্যাণমূখী সংগঠন গড়ার জন্য একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হল-
১। জনাব মোশাররফ হোসাইন, মহকুমা প্রশাসক ২। জনাব মোঃ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক, (৩) জনাব খান মতিয়ার রহমান, চেয়ারম্যান, বাগেরহাট পৌরসভা (৪) এ্যাডভোকেট বাবু নারায়ন চন্দ্র দে, ভাইস চেয়ারম্যান, রেডক্রস ইউনিট, বাগেরহাট, (৫) এ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন, সম্পাদক, রেডক্রস ইউনিট বাগেরহাট, (৬) জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, সম্পাদক, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা, বাগেরহাট, (৭) এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, সভাপতি প্রেস ক্লাব, বাগেরহাট, (৮) জনাব এ,কে,এম, মহিউদ্দিন মুনছুর, সম্পাদক, শিল্পকলা পরিষদ, বাগেরহাট (৯) জনাব বুলবুল কবীর সম্পাদক, শিশু একাডেমী, বাগেরহাট। (১০) জনাব এফ, এম, মুস্তাফিজুল হক, সম্পাদক, নাটাব, বাগেরহাট। (১১) জনাব মোল্লা আব্দুল জব্বার, বাগেরহাট (১২) জনাব কাজী হায়দার আলী, ব্যবসায়ী, বাগেরহাট। (১৩) জনাব কামাল উদ্দিন আহম্মদ, ব্যবসায়ী, বাগেরহাট। (১৪) জনাব আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক, নাটাব, খুলনা বিভাগ।
সভার প্রারম্ভে মাননীয় মহকুমা প্রশাসক জনাব মোশাররফ হোসাইন বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন নামে একটি সংস্থা গঠণের মূল উদ্দেশ্য প্রয়োজনীয়তা ও কর্মসূচীর উপর নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। অতঃপর সভার বিস্তারিত আলোচনান্তে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তবলী গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফাউণ্ডেশনের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বাগেরহাট মহাকুমার গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য ও দুঃস্থ শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড় ও সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবীদের বিপন্ন পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা করা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণ মূখী সংগঠনকে তথা বাগেরহাট মহকুমার জীবনযাত্রার সামগ্রীক মান উন্নয়ন ও সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের উদ্দেশ্য “বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন” নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়। এই ফাউণ্ডেশনের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিম্নলিখিত সদস্যবৃন্দকে নিয়ে উক্ত ফাউণ্ডেশনের একটি এডহক কমিটি গঠিত হয়। যার প্রধান পৃষ্ঠপাষেক জনাব এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমান, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (তৎকালীন)। পৃষ্ঠপোষকবৃন্দ জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আফতাব উদ্দিন হাওলাদার, জনাব মোজাহিদুর রহমান, জনাব খান আঃ লতিফ, মিসেস সুলতানা জামান চৌধুরী। সভাপতি মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট, দপ্তর সম্পাদক জনাব মোল্লা আঃ জব্বার, কোষাধ্যক্ষ জনাব আনোয়ার হোসেন। সদস্যবৃন্দ অধ্যক্ষ, সরকারী পি.সি কলেজ, অধ্যক্ষ, খানজাহান আলী কলেজ, চেয়ারম্যান, বাগেরহাট পৌরসভা, এ্যাডঃ মোজাফফর হোসেন, এ্যাডঃ বাবু নারায়ন চন্দ্র দে, জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, জনাব এ.কে.এম. মহিউদ্দিন মুনসুর, জনাব বুলবুল কবির, ডাঃ খন্দকার হাবিব হোসেন, জনাব সামসুল আলম তালুকদার, এ্যাডঃ মীর শওকত আলী বাদশা, জনাব এফ.এম. মোস্তাফিজুল হক।
লটারীর মাধ্যমে উক্ত ফাউণ্ডেশনের স্থায়ী কল্যাণ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার প্রতিটি টিকিটের মূল্য ২ টাকা করে ধার্য হয়। এবং সর্বমোট ৩ লক্ষ টিকিট ছাপানো হবে এ মর্মে ফাউণ্ডেশনের সভাপতি মহোদয়ের উপর সার্বিক দায়িত্ব অর্পন করা হয় এবং ফাউন্ডেশনের তহবিল স্থানীয় রূপালী ব্যাংক, মেইন রোড শাখায় জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এই ফাউণ্ডেশনটি সুষ্ঠু পরিচালনার লক্ষ্যে গঠনতন্ত্র প্রনয়নের জন্য এ্যাডঃ নারায়ন চন্দ্র দে, এ্যাডঃ মীর শওকত আলী বাদশা এবং জনাব আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠিত হয়। এই সাব কমিটির নিরলস পরিশ্রমের ফলে প্রণীত গঠনতন্ত্র ১৯৮১ সালের ২৫ মে তারিখে এডহক-কমিটির অনুমোদন লাভ করে। এডহক কমিটির ১ম সাধারণ সভায় লটারীর মাধ্যমে ফাউণ্ডেশনের তহবিল গঠনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা ছাপানোর ক্ষেত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষক জনাব এ.এস,এম, মোস্তাফিজুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। এরপর যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে রূপালী ব্যাংকের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক জনাব আ.স.ম মুজিবুর রহমান এবং ঢাকার মহাখালীস্থ সেবা প্রিন্টিং প্রেসের সত্ত্বধিকারী জনাব সফিকুল ইসলাম বাচ্চু মিয়ার নামও স্মরণ করতে হয়। টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তৎকালীন মহকুমার প্রশাসকই নন, গোটা মহকুমার ও প্রতিটি থানার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, এমনকি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী, তৎকালীন খুলনা জেলার বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, জনাব মোজাফফর হোসেন এ্যাডঃ, জনাব শামসুল আলম তালুকদার, জনাব আনোয়ার হোসেন, জনাব মোল্লা আঃ জব্বারসহ বাগেরহাটের আরো অনেক সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৮১ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় রূপালী ব্যাংক, বাগেরহাট মেইন রোড শাখায় স্থায়ী আমানতে ৫ লক্ষ টাকা জমা করা হয়। তাই বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা মূলধনের স্থায়ী আমানত নিয়ে।
১৯৮১ সালের ২৫ মে গঠনতন্ত্র অনুমাদেনের দিনেই এডহক-কমিটি বিলুপ্ত হয়ে নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। কমিটিটি ছিল নিম্নরূপ : প্রধান পৃষ্ঠপাষেক জনাব এ.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পৃষ্ঠপোষকবৃন্দ জনাব আফতাব উদ্দিন হাওলাদার এমপি, জনাব সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান এমপি, জনাব খান আঃ লতিফ এমপি, সভাপতি মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট, সিনিয়র সহসভাপতি অতিঃ মহকুমা প্রশাসক, বাগেরহাট, সহ-সভাপতি জনাব নুর মহম্মদ, প্রধান শিক্ষক, বাগেরহাট মাঃ বিঃ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মোজাফফর হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মীর শওকত আলী বাদশা, দপ্তর সম্পাদক জনাব মোল্লা আঃ জব্বার, কোষাধ্যক্ষ জনাব আনোয়ার হোসেন, সদস্যবৃন্দ অধ্যক্ষ, সরকারী পি.সি কলেজ, অধ্যক্ষ, খানজাহান আলী কলেজ, চেয়ারম্যান বাগেরহাট পৌরসভা, এ্যাডঃ বাবু নারায়ন চন্দ্র দে, জনাব খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, সম্পাদক মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা, বাগেরহাট, জনাব এ.কে.এম মহিউদ্দিন মুনসুর, সম্পাদক, শিল্পকলা পরিষদ, বাগেরহাট, জনাব বুলবুল কবির, সম্পাদক, শিশু একাডেমী বাগেরহাট, জনাব এফ.এম মোস্তাফিজুল হক, সম্পাদক, নাটাব বাগেরহাট, জনাব সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, পৌর কমিশনার, বাবু অনিল কুমার চক্রবর্তী, সহকারী কমিশনার, বাগেরহাট, মিসেস রোজী আক্তার, মহিলা সমাজকল্যাণ সংগঠক, জনাব ইউসুফ আলী, ইউপি চেয়ারম্যান, চানপাই, আঞ্চলিক পুলিশ পরিদর্শক, মোংলা পোর্ট। জনাব সামসুল আলম তালুকদার, শেখ মোজাফফর আলী বুদ্ধু মিয়া, জনাব মোবারক আলী, ব্যবসায়ী, জনাব মল্লিক মোয়াজ্জেম হোসেন, সম্পাদক, বাগেরহাট বার সমিতি, সার্কেল অফিসার, বাগেরহাট সদর, সার্কেল অফিসার, মোল্লাহাট, সার্কেল অফিসার, ফকিরহাট, সার্কেল অফিসার, রামপাল, সার্কেল অফিসার, মোরেলগঞ্জ, সার্কেল অফিসার, শরণখোলা, সার্কেল অফিসার, কচুয়া।
ফাউণ্ডেশনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক প্রতিবছর কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও নানাবিধ প্রতিকূল অবস্থার কারণে তৎকালীন নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের আন্তরিক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও কার্যক্রম চলতে বেশ বিলম্ব হয়েছিল। তবে এই বিলম্বের অন্তরালে ফাউণ্ডেশনের তহবিল সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অবশেষে ১৯৯২ সালের ৭,৮ ও ৯ জানুয়ারী ৩ দিনব্যাপী বৃত্তি ও স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ১ম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন তথা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। উক্ত অনুষ্ঠানে বৃত্তি ও স্বীকৃতি প্রদানসহ সর্বমোট ব্যয় হয়েছিল ৩,৪৮,৭৯২/- (তিন লক্ষ আটচল্লিশ হাজার সাত শত বিরানব্বই টাকা মাত্র)।
১৯৮৮-৮৯ সালে বৃত্তি ও স্বীকৃতি প্রদান বিষয়ক চিত্রঃ
প্রাথমিক বৃত্তি ১৬৩ জন , ডিগ্রী পাস ০৭ জন, জুনিয়র বৃত্তি ২৪ জন, পিএইচডি সহ বিভিন্ন অঙ্গণে প্রতিভার স্বীকৃতি প্রদান ১৪ জন, এস.এস.সি ১৬ জন, এইচ.এস.সি ১৪ জন, জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারী ১৪ জন।
ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্রের আলোকে প্রতি বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন এই নিয়ম কার্যকরী না হওয়ায় অবশেষে ১৯৯৩ সালের ১২ আগষ্ট ফাউন্ডেশনের তৎকালীণ সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জনাব ফজলুর রহমান খান ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের জন্য নিম্নরূপ এডহক কমিটি গঠন করেন :
সভাপতি জেলা প্রশাসক, বাগেরহাট, সদস্যঃ ১. পুলিশ সুপার, বাগেরহাট ২। অধ্যক্ষ, সরকারী পি.সি কলেজ ৩। অধ্যক্ষ, খানজাহান আলী কলেজ ৪। অতিঃ জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ৫। চেয়ারম্যান, বাগেরহাট পৌরসভা ৬। চেয়ারম্যান, মোংলা পৌরসভা ৭। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শিক্ষা কল্যাণ শাখা, সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাগেরহাট সদর।
এডহক-কমিটির ০৭/১০/৯৩ তারিখের সভায় বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের অনুকূলে পঁচাদীঘি ইজারা নেওয়ার জন্য বিধি মোতাবেক সরকারের নিকট আবেদন করা হবে এবং এর আয় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এরপর এডহক কমিটির ০৪/০৮/৯৪ তারিখের সভায় নিম্নরূপ পঁচাদীঘি মৎস্য চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক অতিঃ জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সদস্যঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাগেরহাট সদর, জনাব অনোয়ার হোসেন, সদস্য সচিবঃ জনাব শফিকুর রহমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম প্রায় ১ যুগ বন্ধ থাকার পর বাগেরহাট-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এম.এ.এইচ. সেলিম মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১ম বৃত্তি ও স্বীকৃতি প্রদানের পর ২০০৩ সালে দ্বিতীয়বার কৃতি ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ্য করে ১৫-১৯ অক্টোবর ৫দিনব্যাপী “বাগেরহাট উৎসব - ২০০৩” উদযাপিত হয়।
২০০১-০৩ সালের বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদান চিত্রঃ
ক্যাটাগরি - ১ (বৃত্তি, পদক, সম্মাননা পত্র)।জুনিয়র বৃত্তি ৪৮ জন, এস,এস,সি পরীক্ষায় এ+, এ প্রাপ্ত ৫৯ জন, দাখিল পরীক্ষায় এ প্রাপ্ত ২৭ জন, এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় ৬১ জন, আলীম পরীক্ষায় ১৮ জন, মোট ২১৩ জন।
ক্যাটাগরি – ২ (১টি ক্রেস্ট ও সম্মাননা পত্র)।মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ৬৩ জন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৫৪ টি।
ক্যাটাগরি - ৩ (১টি পদক ও ১টি সম্মাননা পত্র)।উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে কৃতিত্ব ০১ জন, বাগেরহাটের ইতিহাস প্রনেতা ও প্রকাশক ০২ জন, মুক্তিযুদ্ধে অবদান ০৫ জন, ক্রীড়াবিদ ০৪ জন, সাহিত্য কর্ম লেখক ০৪ জন, সাংস্কৃতিক শিল্পী ০৪ জন, সাংস্কৃতিক সংগঠক ২০ জন, ক্রীড়া সংগঠক ২০ জন, সমাজসেবক ২০ জন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ১৭ জন, স্বনির্ভর যুবক/মহিলা ৩৯ জন, মোট ১৩৬ জন।
এছাড়া ১টি সমাজ সেবা সংগঠন, একটি ব্যবসা-বানিজ্য সংগঠন, ১টি গ্রন্থাগারকে স্বীকৃতি প্রদানসহ ১১ জনকে বিশেষ বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাগেরহাট উৎসব ২০০৫” উদযাপন উপলক্ষে বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদানসহ সর্বমোট ব্যয় হয় ৯,৪৭,৩১৪/- (নয় লক্ষ সাতচলিশ হাজার তিনশত চৌদ্দ টাকা মাত্র)।
১৯৯২ সাল এবং ২০০৩ সালের কার্যক্রম ব্যতিত বাগেরহাট ফাউন্ডেশন ইতি মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। তার খতিয়ান তুলে ধরছি -
১। বাগেরহাট কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠায় ৭৫ হাজার টাকা অনুদান, ২। শহীদ চিত্ত রঞ্জনের মায়ের গৃহ নির্মাণে ৬০ হাজার টাকা ৩। মরহুম মুক্তিযোদ্ধা জনাব রফিকুল ইসলাম খোকনের ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য মাসিক ৫০০/- টাকা হারে অনুদান ৪। সরকারী পি.সি. কলেজের ৩য় বর্ষ সম্মান শ্রেণীর ছাত্র প্রদীশ কুমার মন্ডলকে চক্ষু চিকিৎসার জন্য ২ হাজার টাকার অনুদান। এভাবে বাগেরহাটবাসীর কল্যাণে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নিয়োজিত রয়েছে।
১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট ফাউন্ডেশন এর এডহক- কমিটি গঠনের পর দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেক পরে হলেও বাগেরহাট-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এম.এ.এইচ. সেলিম মহাদেয়ের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছায় ২৭/১১/২০০৪ তারিখে নির্বাচনের মাধ্যমে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ২০০৪-০৭ মেয়াদে নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। বাগেরহাট জেলায় ২০০৫ সালে যে সকল শিক্ষার্থী এস.এস.সি/ দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ এবং এ+ প্রাপ্ত হয়েছে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন তাদের বৃত্তি ও সংবর্ধনা প্রদান করছে।
এভাবে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন যুগ যুগ ধরে বাগেরহাটের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকুক এটাই বাগেরহাট জেলাবাসীর প্রত্যাশা।
২০০৫ সালে ফাউণ্ডেশনের কৃতি শিক্ষার্খী সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রচার প্রকাশনা ও স্মরণিকা উপ কমিটির আহ্বায়ক
এ্যাড. শাহীন সিদ্দিকীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সংবর্ধনা’ স্মরণিকায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক
খান সালেহ আহমেদ এর ’বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো।
আমার অনুভুতি
মরহুম এ্যাডঃ এমডি মোজাফফর হোসেন
প্রথম সাধারণ সম্পাদক
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দন্দ্ব চিরকালিন। প্রাগ্রসর সময় তথা সমাজ বাস্তবতা প্রতি নিয়তই নবতর আঙ্গিক আর অবয়বে অনিবার্যভাবেই তার পরিসরের বিপুল বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। এই গতিশীল সমাজ বাস্তবতাকে ধারণ করার যথার্থ সামর্থ ও আন্তরিক প্রয়াস পরিবর্তিত পরিস্থিতির সর্বোত্তম মোকাবেলায় ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করার সঙ্গত কারণ আছে। বিষয়টি কোন ব্যক্তি বিশেষ, এমনকি যে কোন সংগঠনের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠাকালের পর এক যুগ সময়ের পরিধি অতিক্রম করে ১৯৯২ সালে কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশের সেই প্রথম ও শেষ অনুষ্ঠানে তৎকালীন সম্পাদকের (বাগেরহাট ফাউন্ডেশন) প্রতিবেদনে অনেক প্রত্যাশার বীজ বুনেছিলাম। এখন পড়ন্ত বেলায় এসে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের যে কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করেছি, আমার অন্তরে লালিত সেই প্রত্যাশার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, আর কল্পনা বিলাসেই বা কতখানি ঢেকে গেছে, আমার মনে সে সব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত উঁকি মারছে। আমার এ সব প্রশ্ন বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রলুব্ধ করেছে বাগেরহাটবাসীর প্রাণপ্রিয় বাগেরহাট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাগেরহাট উৎসব-২০০৩’ এর অনুষ্ঠানমালার গৃহীত কর্মসূচী সূত্রে।
১৯৮১ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মূলধন নিয়ে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। কুমিল্লা ফাউন্ডেশনের মডেলে এ জনপদের মানুষের জন্য প্রকৃত কল্যাণকর কিছু করবার জন্য তদানিন্তন মহকুমা প্রশাসক জনাব মোঃ মোশাররফে হোসাইন মোল্লা আব্দুল জব্বার, মীর শওকাত আলী বাদশা, আনোয়ার হোসেন ও এই প্রতিবেদকের কাছে উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি বাগেরহাটের বরেণ্য সন্তান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবু সালেহ মোস্তাফিজুর রহমানের গোচরীভুত করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিপুলভাবে উৎসাহিত করেন এবং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিতে এগিয়ে আসেন। তারপর শুরু হয় তহবিল গঠনের নিরলস কার্যক্রম। অর্থাৎ শুরুর শুরু। এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট রেডক্রিসেন্টের তদানিন্তর কর্মচারী মোঃ ইউনুসের নিঃস্বার্থ শ্রম উল্লেখের দাবী রাখে।
একযুগ পর ১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারী থেকে ৯ জানুয়ারী পর্যন্ত চলে প্রথম আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানমালা। সাংগঠনিক পর্যায়ে সময়ের ব্যবধানটা অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্য বিবেচনা করার মধ্যে তেমন কোন অসঙ্গতি নেই। তবে কষ্ট এ কারণে যে, ১৯৯২ সালে যখন ফাউন্ডেশনের ভীত আর্থিক ভাবে যথেষ্ট পুষ্ট এবং ততধিক শক্ত কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে; প্রতিষ্ঠানটি যখন সমগ্র দেশের প্রেক্ষিতে অন্যতম মর্যাদায় অভিষিক্ত তখন কোন অদৃশ্য কারণে একে গতিহীন স্থবির একটি জীবন্মৃত প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্তে পরিণত হতে হল।
অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান আর্থিক শক্তি বিবেচনায় এনে যদি কেউ এ প্রশ্ন তোলেন, অর্ধ কোটির অধিক আর্থিক স্বচ্ছলতা সম্পন্ন এ প্রতিষ্ঠানতো অবশ্যই দৃঢ়মূল হতে পেরেছে। সেটা নিতান্তই দূর্ভাগ্যজনক এবং অবিবেচনাপ্রসূত ভ্রান্ত বিশ্লেষণ হিসাবে পরিগণিত হবে।
১৯৯২ সালে পরবর্তী কর্মতৎপরতাহীন প্রতিষ্ঠানটি গর্ভে শুধু স্থায়ী আমানতের সুদের টাকা জমা হতে হতে সূদেমূলে বর্তমান অবস্থায় উন্নিত হয়েছে। আর্থিক স্ফীতি ঘটেছে যথেষ্ট, কিন্তু সংগঠনের মৌল আদর্শ এবং উদ্দেশ্য চ্যুত হয়েছে নিঃসন্দিগ্ধ ভাবেই। বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন কোন অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান নয় যে শুধুমাত্র আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জনের মধ্যেই তার উদ্দেশ্য বাস্কবায়িত হবে।
১৯৮০ সালে তৎকালীন বাগেরহাট রেডক্রস-এর পৃষ্ঠপোষকতা বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ভিত্তিমূলে অনবদ্য ভূমিকার কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়।আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্নের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বাগেরহাট রেডক্রস ইউনিটের অবদান। সে প্রতিষ্ঠানটির নাম আদর্শ শিশু বিদ্যালয় যা বর্তমানে আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তাই বর্তমানের রেডক্রিসেন্ট (ভূতপূর্ব রেডক্রস), বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, এবং আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে নিবিড় আত্মীয়তার যোগসূত্র। রেড ক্রস বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের প্রারম্ভিক পর্বে চেয়ার, টেবিল, আলমারীসহ আনুসঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপকরণ ও নৈতিক সমর্থন গতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছে। ঠিক একইভাবে বাগেরহাটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত একটি মানসম্মত যুগোপযোগী শিশু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও রেডক্রস তার নিজস্ব ভবনে ক্লাস নেওয়ার সুযোগসহ বিদ্যালয়টির তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থেকেছে। রেডক্রসের এ সব কর্মতৎপরতা প্রকারান্তরে সমাজ কল্যাণের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ১৯৯২ সালের সফল আত্মপ্রকাশের অব্যবহিত পরে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের স্থবিরতা হতাশাব্যঞ্জক, দারুন বেদনাদায়ক।
১৯৯৩ সালের সম্ভবত প্রথম দিকেই বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের যাবতীয় দায়ীত্ব আমি এডহক কমিটির সম্পাদকের কাছে বুঝে দিয়েছিলাম। অতঃপর পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য একটি তিন মাসের এডহক কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেটিই যে প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ পরিগ্রহ করবে -তা কে জানতো। শোনা যায় সম্প্রতিকালে এই এডহক কমিটি সংগঠনের সংবিধানের প্রতি ক্ষেত্র বিশেষে অবিশ্বস্ত হয়েছে। কথিত আছে, সংগঠনের সংবিধানকে অবজ্ঞা করে ব্যক্তি বিশেষ বা কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এভাবে ফাউন্ডেশনের মূলধনের যথেচ্ছা ব্যবহার নিতান্তই অনভিপ্রেত। এমনকি ফাউন্ডেশনের সকল সদস্য তথা বাগেরহাটবাসী চাইলেও কোন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার বাইরে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। ফাউন্ডেশনের তহবিলের স্থায়ী আমানতের বার্ষিক সুদের ৭০% লভ্যাংশ বৃত্তি, সম্মাননা, সম্মেলন উপলক্ষে ব্যয় করা যাবে। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনকে অধিকতর স্থায়ী ও মজবুত রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একে ট্রাষ্টি বোর্ডের আওতায় আনতে চেয়েছিলাম। সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরে রেজিষ্ট্রীভুক্ত সংগঠনের গঠনতন্ত্রে ট্রাষ্টি বোর্ড গঠনের বিষয়টি বিধি বদ্ধ হয়ে আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা আকষ্মিক ভাবেই ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ডে আশার আলো দেখা যাওয়ায় হতাশার ঘন আস্তরণ ছিন্ন করে নুতন আশায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মত একটা পরিপ্রেক্ষিত তৈরী হয়েছে ২০০৩ এর নুতন কর্মসূচীকে ভিত্তি করে। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের রাহুমুক্তির লক্ষণ ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এজন্য সিংহভাগ কৃতিত্ব বাগেরহাটের বর্তমান জেলা প্রশাসক মিঃ পিউস কস্তা মহোদয়ের প্রাপ্য। তার একক প্রচেষ্টাকে তাই সাধুবাদ জানাই।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাইরে অঞ্চলভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আধুনিকমনস্ক মানুষ সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন তাদের কর্মসূচীর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী এবং অর্থবহ করে তোলে। তাই যতবেশী মানব হিতৈষী সমাজ উন্নয়নমূলক সামাজিক সংগঠন আত্মপ্র্রকাশ করবে, তত দ্রুত সমাজ প্রগতির চাকা ক্ষিপ্রতা পাবে। অত্যন্ত আশার কথা, ইতিমধ্যে বাগেরহাটে বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশন এতদাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বহুসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, মসজিদ-মন্দির নির্মাণ এবং অসহায়-পীড়িত মানুষের সাহায্যার্থে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। দে-পাড়া বেলায়েত হোসেন কলেজ তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ সুযোগে বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এম,এ,এইচ সেলিম (এম,পি) সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি।
শহীদ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ফাউন্ডেশনও বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নিবেদিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যা অবশ্যই ধন্যবাদার্হ। বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কর্মপরিক্রমের সীমাবদ্ধতা পূরণসহ ঐ সকল সংগঠনগুলি অনাগত দিনে সমাজ উন্ননের নুতন নুতন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এসব সংগঠনের আত্মপ্রকাশকে আমি অভিনন্দন জানাই। পরিশেষে, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ডে নিয়মতান্ত্রীকতা, সংবিধান আনুগত্যতার অগ্রযাত্রায় গতিশীলতার পূনরুথ্থান ঘটুক, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটবাসীর জীবন যাত্রায় সার্বিক মানান্নেয়ন ঘটুক- এ আমার হৃদয় উৎসারিত একমাত্র চাওয়া।
সব মানুষের কল্যাণ সাধিত হোক। জীবন বিকশিত হোক, সুন্দর হোক, অর্থবহ হোক।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন সম্পর্কে দুটি কথা
মরহুম মোঃ মোশাররফ হোসাইন
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,
বাগেরহাট ফাউন্ডেশন
শৈশবে গুরুজনদের মুখে হযরত খানজাহান (রঃ) ও তাঁর অসংখ্য কীর্তি সম্বলিত বাগেরহাটের নাম শুনেছি। তারা বিশ্ববিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদ, মহান আউলিয়ার মাজার শরীফ, তাঁর খননকৃত বিশাল খাঞ্জেলী দীঘি, ঐ দীঘিতে বসবাসরত কুমির কালাপাহাড়-ধলাপাহাড় এবং এছাড়া অসংখ্য মসজিদ ও দীঘির কথা বলতেন। ফলে এই মহান বুজুর্গ ও তার শেষ শয়নের স্থান বাগেরহাট সম্পর্কে একটি কৌতুহল ও প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধের উন্মেষ ঘটে সেই শৈশব থেকেই। তাই যখন চাকুরীসূত্রে বাগেরহাটে আগমনের নির্দেশ পাই, তখন আমার মন এক স্বর্গীয় পবিত্র আনন্দে ভরে ওঠে। হৃদয়ের সেই পবিত্র আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার নামে ১৯৮০ সালের ১ জুলাই তারিখে মহাকুমা প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করি। এই দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই একটি চিন্তা আমাকে উন্মুক্ত ও অধীর করে তুলতে থাকে।
সেই পঞ্চদশ শতাব্দীর বাগেরহাট অঞ্চলের দূর্গম যাতায়াত, হিংস্র ও বন্য প্রাণীসংকুল সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কিভাবে মহান সেনাপতি আউলিয়া শাসক এতোদঞ্চলে এসেছিলেন এবং এত জনহিতকর কার্য এলাকাবাসীর জন্য করে রেখে গেছেন তা আমার চিন্তাকে বার বার অভিভূত করে। এই মহান আউলিয়ার পবিত্র কর্ম ভূমিতে আমি অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমার কার্যারম্ভ করি। তবে কার্যে যোগদানের অল্প দিনের মধ্যেই এলাকাবাসীর সহৃদয়তা ও সেবাধর্মী মনন লক্ষ্য করি। এছাড়া বাগেরহাটের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের কথা জানতে পেরে এবং জনগণের সহযোগিতাপূর্ণ ব্যবহারে উৎসাহিত বাধে করতে থাকি। এমনিতর এক পরিস্থিতিতে সেবার ঐতিহ্যে লালিত বাগেরহাটবাসীর প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের মত একটি প্রতিষ্ঠান গড়বার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হই। আর বাগেরহাটের অনন্য কৃতি সন্তান, তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রেরণা, সক্রিয় সহযোগিতা, সহৃদয়তা ও অর্থানুকূল্যে অত্র বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নের পথ সুগম করে দিল।
বাগেরহাটের বুকে অগণিত সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান তরণ আনুকুল্য ও সহচার্যের অভাবে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছে। অনেক ভাগ্যহত দুঃখ-দুর্দশার সাথে জীবন যাপন করছে। এ সকল সমস্যার সমাধানের চিন্তাই আমাকে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে। গোটা বাগেরহাটবাসী “বাগেরহাট ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠায় আমাকে যে প্রেরণা, উৎসাহ ও সক্রিয় সহযোগিতা দান করেছেন তার জন্য আমি বাগেরহাটবাসীর জন্য আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়াও ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর সকল প্রকার কর্মকান্ডে যে সকল সেবামনা ব্যক্তি, তকালীন মহাকুমা ও থানা পর্যায়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ বিভাগসহ গোটা খুলনা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতা আমার স্মৃতিতে এবং বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
আজ আমি অনেক দূর থেকেও যখন শুনতে পাই বাগেরহাট ফাউন্ডেশন অর্থনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে সবল ও শক্ত হয়েছে এবং কার্যক্রম করছে তখন আনন্দে গৌরবে আত্মহারা হয়ে যাই।
আল্লাহ বাগেরহাট ফাউন্ডেশনকে দীর্ঘ দীর্ঘ জীবন দান করুন।
২০০৩ সালে ফাউণ্ডেশনের ‘বাগেরহাট উৎসব’ অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্মরণিকা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জনাব বুলবুল কবির এর সম্পাদনায় প্রকাশিত ’প্রত্যাশা‘ স্মরণিকায় বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সম্মানসূচক আজীবন সদস্য জনাব মোঃ মোশাররফ হোসাইন এর ’”বাগেরহাট ফাউন্ডেশন সম্পর্কে দুটি কথা” শিরোনামে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো।